
উত্তরঃ
ইসলামে নারী পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিয়ে হচ্ছে একমাত্র বৈধ উপায় । বিয়ে ছাড়া অন্য কোনভাবে নারী পুরুষের মিলন ও সম্পর্ক স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।বিয়ের মাধ্যমে নারী পুরুষ দুজনে একত্রে বসবাস ও পরস্পরে যৌন সম্পর্ক স্থাপন সম্পূর্ণরূপে বৈধ হয়ে যায়। যার দরুন পরস্পরের উপর অধিকার আরােপিত হয় এবং পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য অবশ্য পালনীয় হয়ে দাড়ায়। ইসলামি শরিয়তে বিয়ের গুরুত্ব বর্ণনা করার সাথে সাথে এর রীতিনীতি বা আইনকানুনও বর্ণনা করা হয়েছে।
আর বিয়ের অন্যতম শর্ত হলাে ইজাব ও কবুল এবং দেনমােহর আদায়। এরপর কুফু বা সমতা বিধান এবং সাথে সাথে কাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া নিষিদ্ধ তা বর্ণনা করা হয়েছে।নিম্নে বিয়েতে ইসলামী শরীয়তের নীতিমালা গুলো কি কি তা তুলে ধরা হলো।
ইসলামি শরিয়তে বিয়ের নীতিমালা ।
*************************************
**যাদের বিবাহ করা হারাম
**************************** : ইসলাম কতিপয় নারী ও পুরুষের মধ্যকার বৈবাহিক বন্ধন সম্পূর্ণ হারাম ঘোষণা করেছেন তাদের তালিকা পবিত্র কুরআনের সূরা নিসা আয়াত নং২২-২৪ আয়াতে ঘােষণা করা হয়েছে.
অর্থ, আর তোমরা নারীদের মধ্য থেকে তাদেরকে বিবাহ করো না ,যাদেরকে বিবাহ করেছে তোমাদের পিতৃপুরুষগণ। তবে পূর্বে যা সংঘটিত হয়েছে (তা ক্ষমা করা হল)। নিশ্চয় তা হল অশ্লীলতা ও ঘৃণিত বিষয় এবং নিকৃষ্ট পথ।
তোমাদের উপর বিয়ে করা হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাদেরকে, তোমাদের মেয়েদেরকে, তোমাদের বোনদেরকে, তোমাদের ফুফুদেরকে, তোমাদের খালাদেরকে, ভাতিজীদেরকে, ভাগ্নীদেরকে, তোমাদের সে সব মাতাকে যারা তোমাদেরকে দুধপান করিয়েছে, তোমাদের দুধবোনদেরকে, তোমাদের শ্বাশুড়ীদেরকে, তোমরা যেসব স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছ সেসব স্ত্রীর অপর স্বামী থেকে যেসব কন্যা তোমাদের কোলে রয়েছে তাদেরকে, আর যদি তোমরা তাদের সাথে মিলিত না হয়ে থাক তবে তোমাদের উপর কোন পাপ নেই এবং তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদেরকে এবং দুই বোনকে একত্র করা(তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে)। তবে অতীতে যা হয়ে গেছে তা ভিন্ন কথা। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আর (হারাম করা হয়েছে) নারীদের মধ্য থেকে সধবা স্ত্রীলোকদেরকে। তবে তোমাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে (দাসীগণ) তারা ছাড়া ,এটি তোমাদের উপর আল্লাহর বিধান এবং এরা ছাড়া সকল নারীকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে চাইবে বিবাহ করে, অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হয়ে নয়। সুতরাং তাদের মধ্যে তোমরা যাদেরকে ভোগ করেছ তাদেরকে তাদের নির্ধারিত মোহর দিয়ে দাও। আর নির্ধারণের পর যে ব্যাপারে তোমরা পরস্পর সম্মত হবে তাতে তোমাদের উপর কোন অপরাধ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।সূরা নিসা আয়াত নং২২-২৪
কুরআনের এ আয়াতের আলােকে নিম্নের নারীদের বিবাহ করা হারাম।
************************************************************************
১. পিতার স্ত্রী : অর্থাৎ সৎ মা, তারা পিতার তালাক দেয়া স্ত্রী তােক কিংবা রেখে যাওয়া স্ত্রী হােক।
২. নিজ মা, অনুরূপভাবে দাদী এবং নানীও হারাম।
৩. কন্যা ও পুত্রের কন্যা এবং কন্যার কন্যাও এর অন্তর্ভুক্ত। তাদের ধারাবাহিকতা নিম্ন দিকে যতই বিস্তৃত হােক না কেন।
৪. বােন, পিতা এবং মাতার দিক থেকে সৎ বােনও এর অন্তর্ভুক্ত।
৫। ফুফু বা পিতার বােন, হােক আপন কিংবা সৎ।
৬।. খালা।
৭।. ভাইয়ের কন্যা।
৮, বােনের কন্যা।।…
৯।, দুধ মা, যিনি শৈশবে তোমাকে দুধ পান করিয়েছেন।
১০।. দুধ বোন।
১১। স্ত্রীর কন্যা। অর্থাৎ, যে স্ত্রীর স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক কার্যকর হয়েছে তার আগের পক্ষের কন্যা।
১২। স্ত্রীর মা অর্থাৎ শাড়ি।।
১৩।ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রী ।
১৪। দুই বােনকে একত্রে নিয়ে করা হারাম।
১৫।অপরের স্ত্রী যতক্ষণ না সে বিধবা হয় অথবা তাকে তালাক দেওয়া হয়।.
আৰাে কতিপয় লারাকে বিয়ে করা হারাম করা হয়েছে।
*******************************************************
*১৪* মুশরিক ও কাফির নারী। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার 221 নাম্বার আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে,
আর তোমরা মুশরেক নারীদেরকে বিয়ে করোনা, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। অবশ্য মুসলমান ক্রীতদাসী মুশরেক নারী অপেক্ষা উত্তম, যদিও তাদেরকে তোমাদের কাছে ভালো লাগে। এবং তোমরা (নারীরা) কোন মুশরেকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা ঈমান না আনে।
একজন মুসলমান ক্রীতদাসও একজন মুশরেকের তুলনায় অনেক ভাল, যদিও তোমরা তাদের দেখে আকর্ষিত হও। তারা তোমাদেরকে দোযখের দিকে আহ্বান করে, আর আল্লাহ নিজের হুকুমের মাধ্যমে তোমাদেরকে আহ্বান করেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে। আর তিনি মানুষকে নিজের নির্দেশ বাতলিয়ে দেন যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।
সূরা মুমতাহিনা মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে মুসলমানরা ! কাফির নারীদের তোমরা বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ রেখো না।
* ১৭*.ব্যভিচারে অভ্যস্ত নারীকে কোন মুমিন বিয়ে করতে পারেনা। তেমনি ব্যভিচারী পুরুষকেও কোন মুমিন নারী বিয়ে করতে পারে না।
*১৮* একত্রে ৪ জনের অধিক স্ত্রী গ্রহণ করা হারাম।
১৯. সাময়িক উপভােগের জন্য ছেড়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে কোন নারীকে বিয়ে করাও ইসলাম হারাম করে দিয়েছে।
বিয়েতে কুফু বা সমতাঃ
************************* কুফু মানে সমতা ও সাদৃশ্য। অন্য কথায়, বর ও কনের সমানসমান হওয়া, একের সাথে অপরনের সামঞ্জস্য হওয়া।বিয়ের উদ্দেশ্য যখন স্বামী স্ত্রীর মনের প্রশান্তি লাভ এবং উভয়ের সতীত্ব পবিত্রতা ও সামঞ্জসা রক্ষা পায় যেন এ মিলমিশ লাভে পথে বাধা ৰা অসুবিধা সৃষ্টির সামান্যতম কারণ না ঘটতে পারে। তার ব্যবস্থা করাএকান্তই কর্তব্য।
পাত্র এবং পাত্রীর জরি গুণাবলি
*********************************বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র এবং পাত্রীর কিছু জরুরী গুণাবলী থাকা দরকার । পাত্রপাত্রী বাছাইয়ের ব্যাপারে ইসলাম সবচেয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে চরিত্র,নৈতিকতা ও দ্বীনদারীর উপর ।বর,কনে দেখার জন্য নিম্নের গুণ গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়ার কথা ইসলাম ঘোষণা করেছে ,
১. বর কনে অনুসন্ধান করলে প্রথম বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত তাদের ঈমান, দ্বীনদারী, তাকওয়া ও নৈতিক চরিত্র।
২. এরপরসৌন্দর্য, সম্পদ ও বংশমর্যাদা। তবে সবার আগে দ্বীনদারীর উপর গুরুত্ব দেয়া দরকার।
যেমন ,হযরত আবু হুরায়রা রসূল (স) থেকে বর্ণনা করেছেন। চারটি কারণে কোন মহিলাকে বিয়ে করা হয়ে থাকে ।
১, তার ধনসম্পদ থাকার কারণে,
২. বংশমর্যাদার কারণে,
৩. রূপ সৌন্দর্যের কারণে এবং
s, দ্বীনদারীর কারণে। তবে তােমাদের দ্বীনদার মেয়েদেরই বিয়ে করাে এবং সুখশান্তিতে থাকো।" বুখারী-মুসলিম।
কনে দেখা কোন এর মতামতঃ
********************************যখন কোন মুসলমান পুরুষ কোন মেয়েকে বিয়ে করার জন্য ইচ্ছা পোষণ করে অথবা কোন মেয়ের পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসে তখন ঐ মুসলমান পুরুষের উচিত বিয়ের পূর্বে মেয়েকে ভালো করে দেখা আর এই দেখা শুধু ইসলামের জায়েজই নয় বরং এজন্য উৎসাহিত করা হয়েছে এই দেখার মধ্যে তিনটি উপকারিতা রয়েছে যেমন
ক. এতে বিয়ের পর পস্তাতে হয় না, হতাশায় ভুগতে হয় না
খ. এতে পাত্রকে পছন্দ করে নেওয়া যায় ।পাত্র বিবাহে উৎসাহিত হতে পারে এবং আকর্ষণ লাভ করতে পারে।
গ.এতে করে বিয়ের পূর্বে বর-কনের মধ্যে সম্প্রীতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করা যায়।
বিয়ের ক্ষেত্রে পুরুষ যেমন কনে বাছাই করার অধিকার রয়েছে তেমনি মেয়ে কেউ তার পছন্দের অধিকার দিয়েছে ইসলাম ।আর কোন মেয়ের অনুমতি ছাড়া কোন বিয়ে অনুষ্ঠিত হতে পারেনা। এই সম্পর্কে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন বিধবার বিয়ে তার স্পষ্ট অনুমতি ছাড়া হতে পারে না। আর কুমারীর সম্মতি ছাড়া তার বিয়ে হতে পারে না। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন হে আল্লাহর রাসূল তার সম্মতি কিভাবে জানা যায়? তিনি বললেন তার চুপ থাকাই তার সম্মতি। (বুখারী ও মুসলিম )
মােহর
*******
মােহর বিয়ের জন্য এমন একটি শর্ত যা ছাড়া বিয়ে হতে পারে না। মােহর পরিশােধ করাকেপবিত্র কোরআনে অপরিহার্য বলে ঘােষণা করা হয়েছে।সূরা নিসার 24 নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“তোমরা তােমাদের স্ত্রীদের থেকে যে স্বাদ গ্রহণ করাে তার বিনিময়ে অপরিহার্য ফরঞ্জ হিসেবে তাদের মােহর পরিশােধ করাে।
ইসলামি শরিয়ত স্ত্রীর মোেহর পরিশোধ করা স্বামীর উপর ফরজ করে দিয়েছে। বস্তুত মোহরানা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কোন প্রকার দান-সদকা নয় বরং এটা আল্লাহ প্রদত্ত একটি অধিকার। আর স্ত্রীর সাথে মিলনের পূর্বে মােহর পরিশােধ করতে হবে।তবে স্ত্রী ইচ্ছা করলে মােহর পরিশােধের জন্য স্বামীকে আবকাশ দিতে পারে। অথবা স্ত্রী ইচ্ছা করলে মাপ করে দিতে পারে।
বিয়ের অনুষ্ঠান প্রচার করায় এবং ওলিমা অনুষ্ঠানঃ
****************************************************
ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে একটি সামাজিক অনুষ্ঠান যে সমাজে বিয়ে হবে সে সমাজের প্রতিটি লোকের বৈবাহিক সম্পর্কের খবর জানা উচিত। আর এই বিবাহ আল্লাহর বিধি-বিধান সম্মত হতে হবে ।যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন, এ বিয়ে অনুষ্ঠানের ব্যাপক প্রচার করো, তা মসজিদে সম্পাদন করো এবং ব্যাপক একতার বাদ্য বাজাও । (তিরমিজি)
বিয়ে উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীদের একত্র করে যে শুভেচ্ছাু ভোজের আয়োজন করা হয় তাই হচ্ছে ওলিমা। রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এ অনুষ্ঠানের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। ইসলামে বিয়ে হচ্ছে ব্যাপক প্রচার ধর্মীয় অনুষ্ঠান ।কোন বিয়েকে প্রচারমুখী করার জন্য এই অনুষ্ঠান করা খুবই কার্যকর।
কোন সমাজ কে ব্যভিচার থেকে বাঁচানোর জন্য ইসলাম যে পদ্ধতিতে দিয়েছে তা হচ্ছে বিবাহ। আর এই বিয়ের মাধ্যমে মানুষের চারিত্রিক পরিশুদ্ধতা অর্জিত হয় এবং সামাজিক জীবনের সূচনা হয় এবং এর মাধ্যমে তার বংশ-পরম্পরা অব্যাহত থাকে আর তাই বিবাহ হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত এক বিশেষ নেয়ামত।