ইসলামী জীবন ব্যবস্থা ছেলে মেয়েদের প্রতি পিতা মাতার দায়িত্ব কি?



 উত্তর: ছেলেমেয়েদের সুষ্ঠুভাবে লালন-পালন করা যেমন পিতা-মাতার দায়িত্ব তেমনই তাদের  যৌন প্রয়োজন পূরণ করে তাদের নৈতিক স্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব পিতা মাতার ।এজন্য বিয়ের বয়স হলে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করা আবশ্যক এবং এ দায়িত্ব প্রধানত তাদের পিতামাতার আর তাদের অবর্তমানে অন্য ।ছেলে মেয়েদের প্রতি পিতা মাতার দায়িত্ব সমূহ নিম্নরূপ ।


. ছেলেমেয়েদের বিয়ের বয়সঃ

***************************************

 ইসলামি আদর্শের দৃষ্টিকোণে ছেলেমেয়েদের বিয়ের ব্যাপারটি  সুস্পষ্ট। ইসলাম ব্যাপারটিকে উন্মুক্ত রেখেছে। বিয়ে সম্পর্কে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার নির্দেশ হলাে পূর্ণ বয়সে ও কার্যত যৌন-সঙ্গমে সক্ষম হওয়ার পরই বিয়ে সম্পন্ন হওয়া উচিত। তবে তার পূর্বে বিয়ে অনুষ্ঠান করাকে নিষেধও করা হয় নি। এমতাবস্থায় ছোট মেয়ে বিয়ে দেয়ার অনুমতি থাকায় মেয়েদের জন্য ক্ষতিকর হবে না । বালেগা হওয়ার পর সে ইচ্ছে করলে ঐ বিয়ে টিকিয়ে রাখতে পারবে বা ভেঙে দিতে পারবে ।বিয়ের জন্য ছেলেমেয়ের কোন বয়স নির্দিষ্ট করে দিয়ে ইসলাম পিতা বা অভিভাবককে

একটা বিশেষ বাধ্যবাধকতার মধ্যে বেঁধে দেয় নি। এ হচ্ছে বিশ্বমানবতার প্রতি ইসলামের বিশেষ অনুগ্রহ। তবে ছেলে বা মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হলে পিতামাতা বা অভিভাবকদের কর্তব্য হলাে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করা। আর এটা না করলে তাদের কৃত পাপের জন্য পিতামাতাই দায়ী হবেন।



বর-কনের বয়সের পার্থক্যঃ

************************************বর-কনের পারস্পরিক বয়সের পার্থক্য ও সামঞ্জস্য সম্পর্কে ইসলামের সুস্পষ্ট মত রয়েছে। এ সম্পর্কে প্রথম কথা হলাে সাধারণভাবে এ দু’য়ের বয়সে খুব বেশি পার্থক্য হওয়া উচিত নয়। তাতে দাম্পত্যভ জীবনে অনেক ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। আর ইসলাম এ সাধারণ অবস্থার প্রতি দৃষ্টি রেখে বলেছে বর-কনের বয়স সাধারণত সমান-সমান হলেই ভালাে হয় এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ বয়সের বিবাহ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।


জুড়ি গ্রহণের ইসলামি শরিয়তে বর-কনের প্রতি উপদেশঃ

***************************************************************************** ইসলামি শরিয়তে ছেলে বা মেয়েকে তার নিজের জুড়ি গ্রহণের ব্যাপারে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখার জন্য কিছু কিছু উপদেশ দিয়েছে।

যেমন, অবিবাহিত ছেলে বা মেয়ের বিয়ের কথা বলা হয়েছে। রাসূল (স) অবিবাহিত ছেলে বা মেয়ে বিবাহ করার উপর গুরুত্ব আরােপ করেছেন। তবে এটা মনে করা ঠিক না যে বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত মহিলা বিবাহ করা অনুচিত। বরং অনেকক্ষেত্রে তাদেরকে বিবাহ করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে ।আবার রাসুল (স) গুরুত্বসহকারে অধিক সন্তানবর্তী ও অধিক প্রেমময়ী মেয়েকে বিবাহ করতে বলেছেন। তিনি সর্বপ্রথম দ্বীনদার মহিলাকে বিবাহ করতে বলেছেন।


বিয়েতে মতামত দানের অধিকারঃ

*********************************************

বিয়ের মতামত জ্ঞাপনের অধিকার  ইসলাম ছেলে ও মেয়ে উভয়কেই দিয়েছে ।ইসলাম ছেলে ও মেয়েকে স্বামী বা স্ত্রী বাছাই করার অধিকার দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করে সূরা নিসার ৩ নম্বর আয়াতে বলেন,

 

অর্থাৎ, “তোমরা বিয়ে কর সেসব মেয়েলােককে যাদেরকে তোমাদের ভালাে লাগে। (নিসা, আয়াত : ৩)

ইসলাম মেয়েদের কে বিবাহের ক্ষেত্রে মতামত গ্রহণ করার অধিকার দিয়েছে

 যদি কোন মেয়ে বিয়েতে মত না দেয় তাহলে সে বিয়ে হবে না ।


 মোহরানাঃ

************

বিয়েতে দেনমােহর যা 'মােহরানা' অবশ্যই ধার্য করা এবং তা যথারীতি আদায় করার জন্য ইসলাম বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আর দেনমােহর হলাে এমন অর্থ বা সম্পদ যা বিয়ের বন্ধনে স্ত্রীর উপর স্বামীদের অধিকার

লাভের বিনময়ে স্বামীকে আদায় করতে হয়। যা আদায় করা স্বামীর উপর ওয়াজিব বা ফরজ। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন সূরা নিসার ২৪ আয়াতে বলেন,

অর্থাৎ, “তােমরা তোমাদের স্ত্রীদের কাছ থেকে যেন, যৌন স্বাদ গ্রহণ কর। তার বিনিময়ে তাদের মােহরানা ফরজ মনে করেই আদায় করো”

দেনমােহরের পরিমাণ কি হওয়া উচিত, ইসলামি শরিয়তে এ সম্পর্কে কোন অকাট্য নির্দেশ নেই। তবে একথা স্পষ্ট

যে, প্রত্যেক স্বামীরই কর্তব্য হচ্ছে তার আর্থিক সামর্থ্য ওস্ত্রীর মর্যাদার দিকে লক্ষ্য রেখে উভয় পক্ষের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোন পরিমাণ মোহর নির্দিষ্ট করে দেয়া ।

শাহ দেহলভি (র) মতে, দেনমােহরের পরিমাণ এমন হওয়া উচিত, যা আদায় করা স্বামীর পক্ষে কষ্টসাধ্য না হয়।


বিয়ের সময় বর-কনেকে সাজানােঃ

**********************************************বিয়ের সময় বর ও কনেকে নতুন পােশাক পরিচ্ছদে সুসজ্জিত করা এবং ছেলেমেয়ের গায়ে হলুদ মাখা ইসলামি শরিয়াতে সম্পূর্ণ জায়েজ।এ সম্পর্কে হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা) বলেছেন, হযরত রহমান ইবনে আওফ (রা) একদিন রাসূল (স) এর খেদমতে হাজির হলেন তখন তার পায়ে হলুদের চিই লাগানাে ছিল। তখনরাসূল (স) এর কারণ জিজেস করলে,তিনি বললেন যে, তিনি আনসার বংশের এক মহিলাকে বিয়ে করেছেন।

এ ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিয়ের সময় বর ও কনেকে সাজানাে ও হনুন লাগানাে প্রাচীনকাল ও রাসুল (স) সাহাবিদের কালেও প্রচলিত ছিল।

তবে আমাদের সমাজে যে প্রচলন রয়েছে তা ইসলাম সমর্থন করে না। আমাদের দেশে গায়ে হলুদের দিন নারী পুরুষ কোন ভেদাভেদ না রেখে একে অন্যকে মেয়ে ছেলেকে গায়ে হলুদ দিয়  এবং গোসল করার প্রচলন আছে তা মোটেই ঠিক নয়। আমাদের দেশে গায়ে হলুদের নামে হিন্দুদের  প্রথা আমরা ইসলামের নামে চালিয়ে দিচ্ছি।

তাই আমাদের উচিত এই সমস্ত অনইসলামিক কাছ থেকে আমাদের বেরিয়ে এসে ইসলামিক সাংস্কৃতি অনুসরণ করা এবং মেনে চলা। তবে বর-কনেকে নতুন পোশাকে সুসজ্জিত করা ইসলাম উৎসাহিত করেছে।



বিয়ে অনুষ্ঠানের প্রচারঃ

*******************************বিয়ে একটি সামাজিক অনুষ্ঠান, তাই সমাজে বাসকারীর যেন এ সামাজিক অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে অবহিত হতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ বিবাহ হওয়ার পর তা সবাইকে জানাতে হবে। বিয়ের অনুষ্ঠান যাতে করে ব্যাপক প্রচার লাভ করে তার নির্দেশ এবং তার উপায় সম্পর্কে রাসূল (স) ইরশাদ করেছেন                                                                                     


অর্থাৎ, "এ বিয়ে অনুষ্ঠানের ব্যাপক প্রচার কর এবং সাধারণত এর অনুষ্ঠান মসজিদে সম্পন্ন কর। আর এ সময়

দফ বাদ্য বাজাও।" (তিরমিযী)


ওয়ালিমার জিয়াফতঃ

****************************বিয়ে অনুষ্ঠান প্রচারের দ্বিতীয় উপায় হলাে ওয়ালিমার জিয়াফত করা। এ অনুষ্ঠান মেয়ে পক্ষেরও যেমন করা উচিত, তেমনি করা উচিত ছেলে পক্ষেরও। নিজেদের ছেলে বা মেয়ে বিয়েতে আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীদের একত্রিত করা একান্তই বাঞ্চনীয়। ইসলামে এ ওয়ালিমা জিয়াফতের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। রাসূল (স) এই  ওয়ালিমা ইসলামি সমাজে বিশেষভাবে চালু করেছেন।


পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, পিতামাতা তাদের সন্তানের লালনপালন, ভরণপােষণ ভবিষ্যতের ভালােমন্দ ইত্যাদি দেয়ার পাশাপাশি তাদেরকে বিবাহ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।


Please Select Embedded Mode For Blogger Comments

নবীনতর পূর্বতন