
হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন মুসলিম ধর্মতত্ত্বের স্বতন্ত্র গবেষক। তিনি ছিলেন একজন তাবেয়ী ।তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসংখ্য রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সহচর্য লাভের সৌভাগ্য অর্জন করেন। তিনি যে সমস্ত সাহাবীদের সহচর্য লাভ করেছিলেন তাদের মধ্যে প্রায় 70 জন ছিল যারা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। হযরত হাসান বসরী রহমাতুল্লাহ কোরআন হাদিস ও ফিকহ বিষয় সহ আরো বিভিন্ন বিষয়ে অধিক জ্ঞান অর্জন করেন। কাকে বলা হয় সুফি সাধনার পদ্ধতির প্রবর্তক।আজ আমরা জানবো হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি এর সম্পূর্ণ জীবনী
হযরত হাসান বসরী রহমাতুল্লাহ আলাইহির জীবনী
পরিচয়ঃ
হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি এর নাম হাসান। তার উপনাম আবু আলী, আবু সাঈ্ আবু মোহাম্মদ, আবু বসর প্রভৃতি। উপাধি বসরী। তিনি জীবনের অধিকাংশ সময় বসরায় অবস্থান করেন।আরে জন্মায় তাকে বসরী উপাধি দেওয়া হয়। তার পিতার নাম মুসারাযী। 12 হিজরীতে হাসান বছরী রহমতুল্লাহি এর পিতা হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করেন ।তার মাতা ছিলেন উম্মুল মু'মিনীন হযরত উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা এর গৃহ পরিচারিকা।হাসান বসরী রহমাতুল্লাহ আলাইহির পিতা ইসলাম গ্রহণের পর মদিনায় বসতি স্থাপন করেন। মদিনায় বসতি স্থাপনের পূর্বে তিনি বসরার নিকটবর্তী মিলাসাম নামক স্থানে বসবাস করতেন।
জন্মঃ
২১ হিজরী মোতাবেক,৬৪২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় নবী পরিবারের একান্ত সান্নিধ্যে হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি জন্মগ্রহণ করেন। এইসময় মুসলিম জাহানের খলিফা ছিলেন হযরত ওমর বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু
নামকরণঃ
তার নাম হাসান হওয়ার পেছনে ছোট্ট একটি ঘটনা রয়েছে জন্মের পরপরই তাকে তাহনিক এর জন্য খলিফা ওমরের কাছে নেওয়া হয়। খলিফা ওমর শিশুটিকে কোলে তুলে নেন এবং শিশুর কমনীয় চিত্তাকর্ষক সুন্দর চেহারা দেখে তিনি বলেন বাহ! শিশুটি তো খুবই সুন্দর অর্থাৎ হাসান। সুতরাং এর নাম হাসান। এরপর থেকে তিনি হাসান নামে অবহিত হতে থাক…
শিক্ষাজীবনঃ
যেহেতু তিনি নবী পরিবারের সান্নিধ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তাই সেখান থেকেই তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিখ্যাত সাহাবীদের কাছ থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন। তিনি কোরআন হাদীস ও ফিকহ বিষয় গভীর জ্ঞান লাভ করেন। এবং উচ্চস্তরের তালিম নেওয়ার কারণে বিশেষ দক্ষ হয়ে ওঠেন। মদিনার বাইরে গিয়েও তিনি সেই সময়কার শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, উপস্থি্ ও খুকি সাহাবী ও তাবেয়ীদের কাছ থেকে তিনি গভীর জ্ঞান অর্জন করেন এবং তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বি ইসলামী জ্ঞান সাধকের পরিণত হন।
সাহাবীগণের সহচর্য লাভঃ
হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি বিপুলসংখ্যক সাহাবা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর সাহায্য লাভের সৌভাগ্য অর্জন করেন। তিনি যে সকল সাহাবীদেরসহচার্যে লাভ করেছিলেন তাদের মধ্যে 70 জন সাহাবী ছিলেন যারা বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু এর খেলাফতঃ
হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি কুরআন-হাদীস ও দক্ষতা অর্জনের পর আধ্যাত্মিক সাধনায় মনোনিবেশ করেন। কথিত আছে সে সময় বসরার মসজিদে মসজিদে জুমার সালাতের পূর্বে ওয়াজ নসিহতের বিশেষ দাওয়াত ছিল। এ সময়ে খলিফা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর গমন করে এবং বিশেষ কারণে মেম্বারসহ ভেঙে ছেলে ওয়াজ-নসিহত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি ওয়াজ নসিহত করতেন। একদিন স্বয়ং হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তার মজলিসে উপস্থিত হন এবং গভীরভাবে মনোযোগ দিয়ে তার ওয়াজ শুনে তাকে জিজ্ঞেস করেন। তুমি কি আলিম নাকি মুয়াল্লিম? হযরত হাসান বসরী বলেন আমি আলিম নই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যেসকল হাদীসসমূহ আমার কাছে এসে পৌঁছেছে আমি কেবল মাত্র সেগুলোই মানুষের সামনে পুনরাবৃত্তি করি। হাসান বস্রি জবাবে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর অত্যন্ত খুশি হলেন এবং তাকে খেলাফত দিয়ে ওয়াজ নসিহত অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন। ফলশ্রুতিতে তিনি এক নতুন গন্তব্যের দিকে পথ চলা শুরু করেন।
কর্মজীবনঃ
সাংসারিক ব্যয় নির্বাহের জন্য হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি মনি-মুক্তার ব্যবসা করতেন ।এজন্য তাকে বিভিন্ন দেশ দেশান্তরে সফর করতে হতো। এই উপলক্ষে একবার তিনি রুমে সফর করেন এবং সেখানে এক বিষাদময় ভয়ংকর ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। এরপর থেকে তিনি পার্থিব জীবনের প্রতি বিপুল ঘৃণা পোষণ করেন এবং তিনি ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে আধ্যাত্মিক সাধনায় লিপ্ত হয়ে পড়েন।
অবদানঃ
তাসাউফের ব্যাপক চর্চার লক্ষ্যে হযরত হাসান বসরী কুফা ও বাগদাদের বিভিন্ন স্থানে মসজিদ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাঁর মনোনীত খলিফাদের এসব স্থানে মনোনীত করেন । যার ফলে উল্লিখিত স্থানগুলোতে তাসাউফ চর্চা করা হতো এবং সে স্থানগুলো তার প্রাণ কেন্দ্রে পরিণত হয় এসব কেন্দ্রে যারা তাঁর ছাত্র ছিলেন তারা মুহাদ্দিস মুখোমুখি হওয়ার পর আধ্যাত্মিক সাধনায় কোন ব্যক্তিত্বের অধিকারী হন ।পরবর্তীতে এরা ইসলাম প্রচারের জন্য ছড়িয়ে পড়েন এবং কুসংস্কার পূর্ণ সমাজকে ইসলামের সমাজে পরিণত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালান।..আর এভাবেই তারা কুসংস্কার পূর্ণ সমাজকে বদলে দিয়ে ইসলামের আলোয় উদ্ভাসিত করে তোলেন
সুফিবাদ প্রতিষ্ঠিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় থেকেই সুফিবাদের ধারা প্রতিষ্ঠা ছিল কিন্তু তখন তা স্বতন্ত্র গ্রুপ লাভ করেনি সাহাবী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর প্রায় প্রত্যেকেই ব্যক্তিগতভাবে তাসৌফ সাধনায় বৃত্ত থাকলেও তাদের সংযোগটি ধারায় স্বতন্ত্র কোনরূপ নির্মাণ করেন কিন্তু হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি সাধনায় নিবেদিত হওয়ার পরপরই তাসাউফে তিনি স্বতন্ত্র ধারা প্রতিষ্ঠা করেন। কোরআন সুন্নাহর আলোকে একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে ফিকাহ শাস্ত্রের পথচলার মতোই তার চেষ্টায় তাসাউফ শাস্ত্র সুবিন্যাস্ত রূপ লাভ করে। তার চেষ্টা-সাধনার পরবর্তীকালে সুফি-সাধক সাধনায় ব্যতীত হওয়ার সুযোগ লাভ করেন।
শিস্যবৃন্দঃ
মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষাদান শুরু হওয়ার পর বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী নিজেদের আধ্যাত্মিক সাধনায় নিয়োগ করেন । তাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো হযরত রাবেয়া বসরী ও হাবিবে আযমী ।
ইন্তেকালঃ
হযরত হাসান বসরী রহমাতুল্লাহ আলাই ক্রমাগত অধ্যবসায় সাধনায় আর কায়িক পরিশ্রমের জন্য জীবনের শেষ দিকে এসে তার স্বাস্থ্য ভেঙ্গে যায়। অবশেষে প্রায়৯০ বছর বয়সে১১০ হিজরী সনে বস রাতে ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আবার কেউ কেউ বলেছেন তার মৃত্যু১৩০ হিজরী সালের হয়েছিল।